আরিফ বললেন ষড়যন্ত্রের বিজয় অনিয়মের অভিযোগ কামরানের

১৭ কেন্দ্রে পুনরায় ভোট চান কামরান : সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম ও জালভোটের অভিযোগ তুলে ১৭টি ভোটকেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। এসব কেন্দ্রে পুনরায় ভোটগ্রহণ না হলে আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার ছিনিয়ে আনার ঘোষণা দেন সাবেক এই মেয়র। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি নির্বাচন পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এ দাবির কথা জানান। এ সময় তিনি বলেন, নির্বাচনের ফলাফল এখনো পুরোপুরি ঘোষণা করা হয় নাই।নিজের ওপর হামলা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কাল (গত সোমবার) সকালে যখন আমি যখন নগরীর খাসদবির কেন্দ্রে ভোট পরিদর্শনে যাই, সেখানে বিএনপির নেতাকর্মীরা আমার ওপর হামলা চালায়। এর একপর্যায়ে বিএনপির সমর্থকরা অস্ত্র প্রদর্শনের মুখে আমাকে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। আমাকে বের করে দেয়ার পরপরই সেখানে ধানের শীষের জাল ভোটের মহোৎসব চলে। তিনি আরও বলেন, বিএনপির মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হকের নির্বাচনি যে কেন্দ্র রয়েছে, তারা সেখানে বিপুল পরিমাণে ধানের শীষে সিল মেরেছে। একপর্যায়ে নৌকার বেজ পরিধান করে বিএনপির বিপুল সংখ্যক সমর্থক রায়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নগরীর বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে একাধারে ধানের শীষ প্রতীকে জাল ভোট মেরেছে। এ ছাড়াও কাজী জালাল উদ্দিন কেন্দ্রের বাইরে পড়ে থাকা ব্যালট পেপার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকালেই আমি জাতীয় একটি দৈনিকের খবরে দেখলাম কেন্দ্রের বাইরে ধানের শীষের প্রতীকে সিল মারা অবস্থায় ব্যালট পেপার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। এ রকম অনেক কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের বেজ পরে বিএনপি জাল ভোটের মহোৎসব চালিয়েছে। এ সময় নগরীর ১৭ কেন্দ্রে অনিয়ম ও জালভোটের অভিযোগের কথা তুলে কামরান বলেন, নগরীর যে কয়টি কেন্দ্র নিয়ে এরকম গুরুতর অভিযোগ রয়েছে, ইতোমধ্যে আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বলেছি যে, আমরা এসব কেন্দ্রে পুনরায় নির্বাচন চাই।
৫ মেয়রপ্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত : সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জামানত হারাতে যাচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়েরসহ পাঁচ প্রার্থী। অন্যরা হলেন- ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, আবু জাফর, বদরুজ্জামান সেলিম ও মো. এহছানুল হক তাহের। নির্বাচনে এই পাঁচ প্রার্থী জামানত টিকিয়ে রাখার প্রয়োজনীয় ভোট পেতে ব্যর্থ হন। নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের চেয়ে ৪ হাজার ৬২৬ ভোট বেশি পেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের আঞ্চলিক অফিস থেকে প্রকাশিত ১৩২টি কেন্দ্রের মধ্যে আরিফুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ৯০ হাজার ৪৯৬ ভোট এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়রপ্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান পেয়েছেন ৮৫ হাজার ৮৭০ ভোট। স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা-২০১০ এর ৪৪ বিধির ৩ উপবিধি অনুযায়ী ভোটগ্রহণ বা ভোট গণনা শেষ হওয়ার পর যদি দেখা যায় কোনো প্রার্থী প্রদত্ত ভোটের ৮ শতাংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাহলে তার জামানত সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। সেই হিসেবে মেয়রপ্রার্থীদের জামানত টিকিয়ে রাখতে ২৪ হাজারের বেশি ভোট পেতে হবে। কিন্তু ৫ প্রার্থীর কেউই এ পরিমাণ ভোট পাননি।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩ লাখ ২১ হাজার ৭৩২ জন ভোটারের বিপরীতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৫৭ জন। যা সিলেট নগরীর মোট ভোটারের ৬২ শতাংশ। সেই হিসেবে জামানত টিকিয়ে রাখতে প্রার্থীদের ১৬ হাজারের মতো ভোট পেতে হতো। কিন্তু ঘোষিত ফলে দেখা যায় নাগরিক ফোরামের প্রার্থী মহানগর জামায়াতে ইসলামির আমির এহসানুল মাহবুব জুবায়ের টেবিল ঘড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ১০ হাজার ৯৫৪ ভোট; ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী ডা. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ২ হাজার ১৯৫ ভোট; সিপিবি-বাসদ মনোনীত প্রার্থী আবু জাফর মই প্রতীকে পেয়েছেন ৯০০ ভোট; নাগরিক কমিটির প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বাসগাড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ৫৮২ ভোট; এবং সচেতন নাগরিক সমাজের প্রার্থী মো. এহছানুল হক তাহের হরিণ প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২৯২ ভোট। এ ছাড়া স্থগিত হওয়া দুটি কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৮৭৭ জন। স্থগিত দুই কেন্দ্রের সবগুলো ভোট পেলেও এই পাঁচ প্রার্থীর কারোরই জামানত টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।
স্থগিত দুই কেন্দ্রের ভোট ১০ দিনের মধ্যে : সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের স্থগিত দুই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ আগামী ১০ দিনের মধ্যে হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. রফিকুল ইসলাম।
গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সিলেট সিটি নির্বাচনের পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা এই কমিশনার এ তথ্য জানান। রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন করে ব্যালট পেপার ছাপানোসহ নির্বাচনের জন্য প্রক্রিয়াগত যত কাজ আছে আশা করছি, আগামী ১০ দিনের ভেতরে সব শেষ হয়ে যাবে। নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, যেহেতু সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্থগিত হয়ে যাওয়া দুটি কেন্দ্রের জন্য মেয়রদের ফলাফলই আটকে আছে, সেহেতু নির্বাচন দ্রুতই সম্পন্ন করা হবে। নির্বাচনের পরে ওই দুটি কেন্দ্রে কী হয়েছিল, তার তদন্ত করা হবে।