লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পূণ্যযাত্রার নাম হজ। এটি ইসলাম ধর্মের পঞ্চ স্তম্ভের একটি। একমাত্র আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশে হাজীরা হজ করে থাকে। এবার হজ নিয়ে লিখেছেন-জিয়া উল ইসলাম

ইতিহাস:
কাবাঘরে সর্বপ্রথম হজ আদায় করেন ইসলামের নবি আদম। তারপর নূহ (আ.) সহ ইসলামের অন্যান্য নবি-রাসূল এ দায়িত্ব পালন করেন। ইব্রাহিম (আ.) এর সময় থেকে হজ ফরজ বা আবশ্যকীয় ইবাদত হিসেবে নির্ধারিত করা হয়। হিজরি সনের ১২তম মাস জিলহজ। ইসলামের বর্ণনা অনুসারে এসময়ই আল্লাহতাআলা ইব্রাহিম (আ.) কে হজ ফরজ হওয়ার ঘোষণা করার নির্দেশ দেন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে এ আদেশের পর ইব্রাহিম (আ.) আবু কোবাইস পাহাড় আরোহণ করে দুই কানে আঙ্গুলি রেখে ডানে-বামে এবং পূর্ব-পশ্চিমে মুখ ফিরিয়ে ঘোষণা করেছিলেন। হে লোক সকল! তোমাদের পালনকর্তা নিজের গৃহনির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের ওপর এই গৃহে হজ ফরজ করেছেন। তোমরা সবাই পালনকর্তার আদেশ পালন কর। এই বর্ণনায় আরো উল্লেখ আছে যে, ইব্রাহিম (আ.) এর ঘোষণা স্রষ্টার পক্ষ থেকে বিশ্বের সবখানে পৌঁছে দেয়া হয়। হজ-এর বিভিন্ন আচার-আচরণ ইব্রাহিম (আ.) এর জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। বিভিন্ন ইসলামিক বর্ণনায় উল্লেখ আছে ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহতাআলার নির্দেশে তাঁর স্ত্রী বিবি হাজেরাকে নির্জন মরুভূমিতে রেখে এসেছিলেন। সেখানে কাবা শরিফের অদূরে, বিবি হাজেরা নবজাত শিশু ইসমাইল (আ.)কে নিয়ে মহাবিপদে পড়েছিলেন। সাহায্যের জন্য কাউকে না পেয়ে তিনি পানির খোঁজে সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করেছিলেন। এই ঘটনাকে স্মরণ করেই হজের সময় মুসলিমদের জন্য সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে সায়ি (দৌড়াদৌড়ি) করার নিয়ম রয়েছে। ইসলামিক বর্ণনায় উল্লেখ আছে স্রষ্টা বেহেশত থেকে হযরত আদম ও হাওয়া (আ.) কে যখন পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন, এতে তারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। পরবর্তীতে উভয়ে আরাফাত ময়দানে এসে মিলিত হন। এই ঘটনার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ হজের একটি অংশ হিসেবে মুসলিমরা আরাফাতের ময়দানে এসে উপস্থিত হয়ে স্রষ্টার কাছে কান্নাকাটি করে ইবাদতে মগ্ন হন।
ইহরাম : হজকালীন সার্বিক অবস্থাকে বলা হয় ইহরাম যার প্রধান চিহ্ন হলো দুই খন্ড সেলাইবিহীন সাদা কাপড় পরিধান। ইহরাম-এর নির্দ্দিষ্ট স্থানকে বলা হয় মিকাত। হজের সময় এই দোয়া পাঠ করা হয়। লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিয়ামাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা-শারিকা লাকা। এর অর্থ হলো, হে আল্লাহ, আমি হাজির, আমি হাজির। আপনার কোনো শরিক নেই, আমি হাজির। নিশ্চই সকল প্রশংসা ও নেয়ামত আপনারই এবং সমগ্র বিশ্বজাহান আপনার। আপনার কোনো শরিক নেই।
হজের ফরজ ৩টি
১। ইহরাম বাধা ২। উ’কুফে আ’রাফা (আরাফাতের ময়দানে অবস্থান) ৩। তাওয়াফুয্ যিয়ারাত
হজের ওয়াজিব ৬টি
(১) ‘সাফা মারওয়া’ পাহাড় দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ি করা।
(২) অকুফে মুযদালিফায় (৯ জিলহজ) অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যদয় পর্যন্ত একমুহ‚র্তের জন্য হলেও অবস্থান করা।
(৩) মিনায় তিন শয়তান সমুহকে পাথর নিক্ষেপ করা।
(৪) ‘হজ্জে তামাত্তু’ ও ‘ক্বিরান’ কারীগণ ‘হজ’ সমাপনের জন্য দমে শোকর করা।
(৫) এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা।
(৬) মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ মক্কা থেকে বিদায়কালীন তাওয়াফ করা।
ইহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ কাজ
(১) সেলাইযুক্ত যে কোন কাপড় বা জুতা ব্যবহার, এক্ষেত্রে স্পঞ্জ সেন্ডেলের ব্যবহার করা।
(২) মস্তক ও মুখমন্ডল (ইহরামের কাপড়সহ যে কোন কাপড় দ্বারা) ঢাকা।
(৩) পায়ের পিঠ ঢেকে যায় এমন জুতা পরা।
(৪) চুলকাটা বা ছিড়ে ফেলা।
(৫) নখকাটা।
(৬) ঘ্রানযুক্ত তৈল বা আতর লাগানো।
(৭) স্ত্রীর সঙ্গে সংগম করা।
(৮) যৌন উত্তেজনামূলক কোন আচরণ বা কোন কথা বলা।
(৯) শিকার করা।
(১০) ঝগড়া বিবাদ বা যুদ্ধ করা।
(১১) চুল দাড়িতে চিরুনী বা আঙ্গুলী চালনা করা, যাতে ছিড়ার আশংকা থাকে।
(১২) শরীরে সাবান লাগানো।
(১৩) উকুন, ছারপোকা, মশা ও মাছিসহ কোন জীবজন্তু হত্যা করা।
(১৪) কোন গুনাহের কাজ করা, ইত্যাদি।
হজের নিয়ত : আল্লাহুম্মা ইন্নি উরীদুল হাজ্জা ফায়াচ্ছিরহু-লী অ-তাকাব্বালহু মিন্নী। বাংলা নিয়াত- হে আল্লাহ আমি পবিত্র হজ পালনের জন্য ইহরাম বেধে নিয়ত করলাম তা সহজ করে দিন এবং কবুল করে নিন।
ইসলামে হজের গুরুত্ব : আবু হোরায়রা বর্ণিত এক হাদিসে ইসলামের নবি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করে এবং অশ্লীল ও গোনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকে, সে হজ থেকে এমতাবস্থায় ফিরে আসে যেন আজই মায়ের গর্ভ থেকে বের হয়েছে।
অর্থাৎ জন্মের পর শিশু যেমন নিষ্পাপ থাকে, সেও তদ্রæপই হয়ে যায়। আরেকটি হাদিসে তিনি বলেছেন, শয়তান আরাফার দিন হতে অধিক লজ্জিত ও অপদস্থ আর কোনো দিন হয় না, কেননা ওই দিন আল্লাহতায়ালা স্বীয় বান্দার প্রতি অগণিত রহমত বর্ষণ করেন ও অসংখ্য কবিরা গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তিনি আরো বলেছেন, একটি বিশুদ্ধ ও মকবুল হজ সমগ্র পৃথিবী ও পৃথিবীর যাবতীয় বস্তুর চেয়ে উত্তম। বেহেস্ত ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু তার প্রতিদান হতে পারে না।
কাদের ওপর হজ ফরজ:
ঐ সকল লোকের উপর হজ করা ফরজ যারা স্বাধীন, প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ মস্তিস্ক ও সুস্থদেহের অধিকারী। যখন তারা পথের খরচের উপর সক্ষম হয়। আর তা বাসস্থান ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস থেকে এবং ফিরে আসা পর্যন্ত আপন পোষ্য পরিজনের খোরপোষ থেকে অতিরিক্ত হয়, আর পথও নিরাপদ হয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয় বান্দাদের মধ্যে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রত্যেক সামর্থ্যবান মানুষের ওপর আল্লাহর জন্য বায়তুল্লাহর হজ করা ফরজ। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবি করিম (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বাধিক উত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের ওপর ঈমান আনয়ন করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর কোনটি? তিনি বলেন, হজে মাবরুর বা মকবুল হজ আদায় করা।(বুখারি শরিফ, হাদিস : ১৪২৯)।কেউ হজে গিয়ে মারা গেলে কিয়ামত অবধি হজের সওয়াব লাভ করবে। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি হজ, ওমরাহ অথবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের উদ্দেশ্যে বের হয়, অতঃপর পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়ে যায়, তাহলে আল্লাহ তাআলা তাকে গাজী (যোদ্ধা), হাজি ও ওমরাহকারীর সওয়াব দান করবেন। (মিশকাত শরিফ, হাদিস : ২৫৩৯)। হাজিরা হলেন আল্লাহর মেহমান। রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হজ ও ওমরাহকারীরা হচ্ছেন আল্লাহর দাওয়াতি যাত্রীদল। যদি তাঁরা আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন, তিনি তা কবুল করেন। আর যদি তাঁরা তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন, তাহলে তিনি তাঁদের ক্ষমা করে দেন (মিশকাত শরিফ, হাদিস : ২৫৩৬)। হজ মানুষকে পূত-পবিত্র করে নতুন জীবনে ফিরিয়ে আনে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনোরুপ অশ্লীল কথা বা গুনাহর কাজে লিপ্ত না হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে হজ সম্পন্ন করে, সে সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসে (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৫২১)। স্মরণ রাখতে হবে যে কারো ওপর জাকাত ফরজ না হয়েও তার ওপর হজ ফরজ হতে পারে। কেননা হজ ও জাকাতের মধ্যে বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। হজ ও জাকাতের মধ্যে পার্থক্য হলো, জাকাতের সম্পর্ক নির্ধারিত নিসাবের সঙ্গে। হজের সম্পর্ক মক্কায় আসা-যাওয়ার খরচের সঙ্গে। সুতরাং স্থাবর সম্পত্তির কিছু অংশ বিক্রি করে কেউ যদি হজ আদায় করতে সক্ষম হয় এবং হজ থেকে ফিরে এসে বাকি সম্পত্তি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, তাহলে তার ওপর হজ ফরজ (ইমদাদুল আহকাম : ২/১৫২; আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৫১৬)।একইভাবে ব্যবসায়ীর দোকানে যে পরিমাণ পণ্য আছে, তার কিছু অংশ বিক্রি করলে যদি হজ করা সম্ভব হয় এবং ফিরে এসে যদি বাকি পণ্য দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা যায়, তাহলে তার ওপরও হজ ফরজ। (ইমদাদুল আহকাম : ২/১৫৩)। মনে রাখতে হবে যে আগে নিজের হজ আদায় করবে। পরে মাতা-পিতার চিন্তা করবে। সামর্থ্য থাকলে তাঁদের নিয়ে একসঙ্গে হজ করবে। অন্যথায় আগে নিজের ফরজ আদায় করবে। (রহিমিয়া : ৮/২৮২)।
অন্ধ ব্যক্তির ওপর হজ করা ফরজ নয়?
যদি চোখে দেখতে পাবার সময় হজ ফরজ হয়, কিন্তু অলসতা করে হজ করেনি। তারপর অন্ধ হয়ে গেছে। সেই সাথে সে হজ করার সকল শর্ত রয়েছে। তাহলে উক্ত ব্যক্তি যদি নিজে না পারে, তাহলে অন্যকে দিয়ে বদলি হজ করিয়ে নিবে।
কুরবানি করা মুস্তাহাব হজে ইফরাদ পালনকারীর জন্য কুরবানি করা ওয়াজিব নয় বরং মুস্তাহাব। সুতরাং সামর্থ্য থাকলে কুরবানি করতে চেষ্টা করবেন।
মক্কা বিজয়-এর দ্বিতীয় বছরে ইসলামের নবি মুহম্মদ (সা.) তাঁর জীবনের সর্বশেষ হজ পালন করেন। এটি বিদায় হজ নামে মুসলিমদের কাছে পরিচিত। এর পূর্ববর্তী বৎসরে তিনি হজ করেননি। মক্কা বিজয়ের পরবর্তী বছরে ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.) এর নেতৃত্বে হজ সম্পাদিত হয়। পরবর্তী বছরে মুহম্মদ (সা.) হজের নেতৃত্ব দান করেন। বিদায় হজ-এর মাধ্যমে তিনি মুসলিমদের জন্য আদর্শরূপে হজ পালনের নিয়মাবলী উল্লেখ এবং প্রদর্শন করেন। এই হজের সময় তিনি আরাফাতের ময়দান-এ যে ভাষণ প্রদান করেন তা মুসলমানদের কাছে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
- প্রেমের কথা স্বীকার করলেন ভাবনা
- চ্যালেঞ্জিং মৌরী
- টিপু-বিন্দুর ওর্ণি রেকর্ডস
- শানুর শিশুতোষ গল্পের বই
- আবাহনীতে মিরাজ মোহামেডানে আশরাফুল
- আরামবাগের কাছে নোফেলের হার
- আইপিএল খেলতে আগ্রহী সাকিব : পাপন
- বিমানে তুলে দিলেই হবে না, শ্রমিকের নিরাপত্তার দায়িত্বও নিতে হবে
- ৬ দফা দাবিতে ঢাবি ভিসির কার্যালয় ঘেরাও
- কবিতার বইয়ে সয়লাব স্টল-প্যাভিলিয়ন
- শহীদ মিনারের পাশে স্থাপন হয়নি গ্রন্থাগার ও জাদুঘর
- আ.লীগের তালিকায় ভিন্নপন্থি ও মাদক ব্যবসায়ীরা
- চট্টগ্রামে শিশু গুলিবিদ্ধ
- যে বিশেষ চিহ্নগুলো বলে দেবে দাম্পত্য জীবন কেমন যাবে
- পরুষত্বহীনতা-অ্যাজমা-ক্যান্সার দূর করে ‘ইয়ারসাগুমবা’
- জেনে নিন লেবু-পানির উপকারিতা
- বলিরেখা পড়া ঠেকিয়ে রাখবেন যেভাবে
- অ্যালোভেরা জুস খেলে মিলবে যেসব উপকার
- বিশ্বকাপের আগে প্রস্তুতি ম্যাচের সূচি প্রকাশ
- মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণে নতুন সিন্ডিকেট
- হেরেও জিতে গেল বিএনপি!
- বিশ্ব ইজতেমা : আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করবেন কোন মাওলানা
- জিন্স প্যান্ট পরিধানে হারাতে পারেন দাম্পত্য সুখ!
- নতুন গাড়ি ফিরিয়ে দিচ্ছেন মন্ত্রীরা